ডেস্ক রিপোর্ট:
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিকভাবে পার্বত্য অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে হবে। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এই কথা বলেন। রাজধানীর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের জন্য আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি অনুষ্ঠিত হয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদে পরিপূর্ণ পার্বত্য জেলাগুলো বাংলাদেশের সবচাইতে উন্নত অঞ্চল হতে পারত। কিন্তু তারা এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। এটা হওয়ার কথা নয়। ফসল, ফল-ফলাদি, ঐতিহ্যবাহী পণ্য দিয়ে এখানকার অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়ার কথা। পার্বত্য এলাকাগুলো দুর্গম, সেজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব কঠিন। আর এ কারণেই সেখানে প্রযুক্তির প্রসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তি দিয়ে এই দূরত্ব জয় করা সম্ভব।
নারী ফুটবল টিমে পার্বত্য জেলা থেকে আসা খেলোয়াড়দের সঙ্গে বৈঠকের স্মৃতিচারণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের টিমকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। সেই এলাকার মেয়েরা কী দুর্দান্ত খেলল! কীভাবে বলবেন তারা পিছিয়ে আছে? যারা ওই অঞ্চলের থেকে এসেছে, তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কত কঠিন পরিস্থিতি! কত কষ্ট করে পাহাড় ভেঙে বাড়ি পৌঁছাতে হয়। কিন্তু এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা বিশ্বজয় করেছে।
পার্বত্য এলাকার তরুণরা যেন বিশ্ব নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে, এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, মেয়েরা ফুটবলে বিশ্বজয় করেছে। তরুণদের শুধু বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে না, তাদেরকে বিশ্ব নাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে হবে। দুর্গম এলাকা হওয়া মানে পিছিয়ে থাকা নয়। সীমাবদ্ধতা থাকবে, কিন্তু মনের সীমারেখা বাড়াতে হবে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে নিজ কৃতিত্ব দিয়ে পৌঁছাতে হবে।
জানুয়ারিতে তারুণ্যের উৎসবে পার্বত্য অঞ্চলের তরুণদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আপনাদের শিশু ও তরুণদের এই উৎসবে অংশ নিতে উৎসাহ দিন। স্থানীয় খেলা হোক, রচনা প্রতিযোগিতা, গান-নাচ, যা কিছু তারা পারে বা চায় তা নিয়ে যেন অংশগ্রহণ করে। এটি সবার উৎসব হতে হবে। উৎসবটি বৈচিত্র্যময় হোক। সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে নয়, নিজেদের উদ্দীপনা থেকে তারা যেন উৎসবে যোগ দেয়।
এ সময় পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও সঠিক পদ্ধতি, প্রশিক্ষণের গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক কঠিন সংকটে রয়েছে, আর পার্বত্য অঞ্চলে এটি আরও বেশি কঠিন। শিক্ষকদের কষ্ট হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের কষ্ট হয়। সারা দেশে অনিয়ম রয়েছে, আর সেই অঞ্চলে তার পরিমাণ আরও বেশি। আপনাদের পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হতে হবে। আমরা চেষ্টা করব রাষ্ট্রীয়ভাবে কীভাবে এর সমাধান করা যায়। পার্বত্য অঞ্চলের তরুণরা দুর্গম এলাকায় বসবাস করলেও বড় শহর থেকে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকতে পারবে না। তাদের লেখাপড়ায় এগিয়ে যেতে হবে।
Leave a Reply